🌿 তুলশি পাতা: চাষ থেকে হাতে তৈরি প্রাকৃতিক সাবান পর্যন্ত –
(Tulsi Leaf Cultivation to Handmade Soap Production)
বাংলাদেশের মাটিতে তুলশি একটি আশীর্বাদ। এই সুগন্ধি ভেষজ গাছ শুধু ধর্মীয় নয়, ত্বকের যত্নেও অমূল্য উপাদান। তুলশি পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট গুণ ত্বকের ফাংগাল ইনফেকশন, ব্রণ ও দাগ দূর করতে সহায়তা করে। তুলশি পাতা নিয়ে এই উপমহাদেশে অনেক রুপকথার গল্প ও মিথ প্রচলিত আছে ।
হাতে তৈরি সাবানের যাত্রা ২০২০
২০১৫-২০১৬ সাল হাকেল বেরী পরিবারের যাত্রাব । পররবর্তিতে ২০১৭ সালের অক্টবরে প্রথম চুলের যন্তে ভেন্নার তেল বাজারজাত করনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় , বাংলাদেশে তখন ভেজাল ও ভয়ংকর সব ফর্সা কারি ক্রিমে সয়লাব , সাথে চায়না ক্যামিকেল হেয়ার অয়েল । আমি তখন ঘাবড়ে যাই কি করবো , অনেক ভেবে আমি অটল , বের হয়ে আসি চক বাজারের নোংরা কসমেটিক , র নামে কালো টাকার বলয় থেকে , নিজেই জেলায় জেলায় ঘুরে পন্য বেচার চেষ্টা ও মনে প্রানে ভাবছি কেমিকেলের বলয় ভাংতে কি করা যায় মাথায় আসে এই হাতে তৈরি সাবান এর – তাও আবার আমার তৈরি ভেন্নার তেলের বাই প্রোডাক্ট । মাঝ খানে অযস্র গল্প , পরবর্তিতে ২০২০ সালে চলে যাই দিল্লির CSDO তে , সেখানে কাটাই ২০২০ সাল টা , ডিসেম্বরে দেশে এসেই শুরু করি সাবানের জন্য হাত পাকা করা , পাশাপাশি ভেন্নার তেল বিক্রি করি ঘুরেঘুরে । প্রায় ১০০ রকমের সাবান বানাই , সঠিক হিসেব বলতে পারবো না কত খরচ হয়েছে এই ১০০ রিকমের সাবান বানাতে , ২ টা হিসেব মনে আছে শুধু , দিল্লি থেকে ফিরার পথে ২.৫০ কেজি এরোমা এনেছিলাম – ৩৫০০০ রুপি দিয়ে , দেশে এসে শুধু তেল খরচ করেছিলাম ২৫০ কেজি, সাবান বানানু বাবদ । বাকি অজস্রে খুরচ , পাশা পাশি আমার কৃষি সেটাপ এর যাত্রা শুরু করি ২০২১ সালের এপ্রিল বা মে তে । এবং তখনি হাকেল বেরো পরিবার এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে –
মাঝখানে অজস্র গল্প তৈরি হয় আছে সব আমার ব্লগে লিখা পরে নিবেন …।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ি প্রায় ১০ রকমের হাতে তৈরি সাবান উৎপাদন স্রেয় । কিন্তু প্যাকেজিং , বি,এস,টি,আই, আরো অন্যন্য বিষয় মিলে আমরা ১০ রকম থেকে ফিলটার করে ৪ রকমে নিয়ে আসি , প্রথমে দারুচিনি,কয়লা পরপর ই নিয়ে আছি তুলশি , এর কয়েক মাশ পরে সাজনা পাতা / মরিংগা যো যোগ করি । এই চার টা বার/ সাবান বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ত্বকের ধরন অনুসায়ি এই চার রকমের সাবান উপযোগি । ২০২২-২০২৩ আমরা শিখেছি , উৎপাদন বারিয়েছি, এখন আমরা সারা বাংলাদেশ সহ দেশের বাইরে থেকেও আমাদের সাবানের গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছি ।
তার মধ্যে – তুলশি পাতার বার/সাবান টা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে , এর বেশ কারন ও আছে , কারন তুলশি পাতা এমন একটা প্রাকৃতিক মহা দান , যে এটা একটা ধর্মিয় উপাশনার যায়গায় পৌছে গেছে । এই তুলশি পাতার বার টা আমাদের স্কিনের দুইটা বিশেষ কাজ করে , ১ – নাম্বার হল ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাল প্রতিরোধক ও এলার্জি স্কিনের জন্য প্রাকৃতিক আশির্বাদ ।
বর্তমানে আমরা হাকেল বেরী পরিবার শতভাগ তুলশি আমাদের নিজেদের জমিতে উৎপাদন করি । এখানে পাবেন একটা তুলশি পাতা কি ভাবে সাবান হয়ে উঠে ।
tulsi cultivation in Bangladesh, holy basil farming, handmade tulsi soap, organic farming, herbal skincare
🌿তুলশি চাষ চক্র –
https://www.youtube.com/watch?v=0rsHvvinVN4&t=9s
তুলশি গাছ উষ্ণ ও রোদযুক্ত আবহাওয়া পছন্দ করে।
১. তুলশি বীজ থেকে চারা গজানো (Seed to Seedling)
তুলশি বীজ সাধারণত মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে বপন করা হয়। ৭–১০ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ছোট চারা বের হয়। ভালো রোদ আর হালকা আর্দ্র মাটিতে তুলশির বীজ দ্রুত গজায়।
tulsi seed germination time, holy basil seedling stage, organic basil farming
🌱 ২. জমিতে রোপণ ও যত্ন (Field Transplanting)
চারা ২০–২৫ দিনের মধ্যে ৫–৬ ইঞ্চি লম্বা হলে জমিতে স্থানান্তর করা হয়। তুলশি গাছ রোদ পছন্দ করে, তাই উঁচু ও পানি নিস্কাশনযুক্ত জমি সবচেয়ে উপযুক্ত।
মাটি হবে দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ, পিএইচ ৬–৭ এর মধ্যে।
পানি সেচ:
বাংলাদেশে বর্ষায় প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় (প্রায় ৯০–১০০ দিন)।
শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ৭–১০ দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে হয়।
tulsi farming soil type, basil irrigation schedule, organic tulsi field management
🌿 ৩. ও পাতা সংগ্রহ ও শোকানো (Maturity & Leaf Harvesting)
চারা রোপণের প্রায় ৭০–৮০ দিন পর গাছ পূর্ণ পরিপক্ব হয় এবং তখন থেকে প্রতি ২০–২৫ দিন অন্তর পাতা সংগ্রহ করা যায়।
পাতা কাঁচা রোদে শুকানো উচিত নয়; ছায়াযুক্ত স্থানে শুকালে এর প্রাকৃতিক সুগন্ধ ও তেল বজায় থাকে।
🌿৪. পাতা থেকে হাতে তৈরি সাবানে ব্যবহার উপযোগি গুড়া (Powder from )
তুলশি পাতা হাতে তৈরি সাবানের উপযোগি করে শুকাতে হলে , খেয়াল রাখতে হবে যে – পাতা শুকাতে হবে ছাড়া যুক্ত রোদে ( মানে হল- এমন যায়গায় রোদ দিতে হবে যে যায়গার মিনিমাম ২ দিকে ছায়া আছে , তিন দিক থাকলে তো খুবি ভালো । ) কারন তিব্র রোদে পাতা ঝলশে না যায় । ফলে পাতার প্রাকৃতিক সুগন্ধ ও তেল বজায় থাকে। যেদিন পাতা শুকাবো সেদিন ই পাতা ব্ল্যান্ড করে গুড়া করে ফেলতে হবে এবং বাতাস না লাগে এমন ভাবে সংগ্রহ করতে হবে ।
tulsi leaf harvesting time, basil drying method, essential oil preservation
তুলশি পাতায় ত্বক ,র উপকারিতা – 📚 রিসার্চ রেফারেন্স –
১- অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল প্রোটেকশন: ত্বকের জীবাণু নাশ করে, ব্রণ কমায়। PMC+1
২- অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি: প্রদাহ ও র্যাশ কমাতে সাহায্য করে । ijcmas.com
৩- অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট গুণ: ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। ijcmas.com
৪- স্কিন ডিটক্সিফায়ার: ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। Healthline+1
🧼 হাতে তৈরি সাবান ও তুলশি পাতা চক্র –
১- তুলশি পাতার পাউডার তৈরি –
খুব সকালে পাতা তুলশি পাতা সংগ্রহ করা ভালো, কারন প্রথম রোদে শুকালে পাতা ১-দের ঘন্টার মধ্যে শুকিয়ে যায়। এবং আপনি যদি এক রোদে পাতা শুকিয়ে নিতে পারেন তাহলে আপনার সাবান/বার এর কোয়ালিটি হবে ১ গ্রেড এর । যখন পাতা একদম শুকিয়ে মচমচা হয়ে যাবে, তখন ব্লেন্ডার বা গ্রাইন্ডার দিয়ে মিহি গুড়া তৈরি করুন ।
👉 এই গুঁড়া সরাসরি সাবানের মিশ্রণে যোগ করলে তা ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েটর ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করবে ।
২- ত্বক অনুযায়ি তেলের মিশ্রণ –
হাতে তৈরি কোল্ড প্রসেস সাবান/বার তৈরিতে তেলের সঠিক অনুপাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে গ্রাহকের কাছে দীর্ঘস্থ্যায়ি হিসেবে গ্রহন যোগ্যতা পাবেন না । তেলের এই অনুপাতিক টা নির্ভর করে দুইটা বিষয়ের উপর , ভৌগলিক অবস্থান ও কোন তেলের সাথে কোন তেল মিশাচ্ছি , নিচের সমভাব্য একটি অনুপাত দেয়া হল 👇
নারিকেল তেল – ৪০ ভাগ
জলপাই তেল – ৩০ ভাগ
ভেন্নার তেল – ১০ ভাগ
সূর্যমুখি তেল – ১০ ভাগ
পাম তেল – ১০ ভাগ ( চাইলে রেসিপি পরিবর্তন করে অন্য আরো তেল ও যোগ করতে পারেন )
৩- কস্টিক সোডা –
হাতে তৈরি সাবান এ এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সতর্কতার ধাপ।
কস্টিক সোডা (NaOH) এবং পানি মিশিয়ে Lye Solution তৈরি করতে হয় । পানিটা অবশ্যই ডিস্টিল হতে হবে , আমরা হাকেল বেরী পরিবার বৃষ্টির পানি ব্যাবহার কর ।
সর্বদা সোডা পানিতে ঢালুন, পানি কখনোই সোডা তে দেয়া যাবে না।
লাই সলিউশন তৈরি করার সময় ঘন ধোঁয়া উঠবে, তাই ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় তৈরি করুন।
লাই সলিউশন ও মিক্স তেল যখন এক সাথে মিশানু হয় সাপনিফিকেশান এর জন্য তখন সতর্ক থাকতে হয় ।
৪- তুলশি পাউডার – তুলশি পাতা স্কিনে ও সমস্যা অনুযায়ি ২- ৫ ভাগ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়
৫- এসেনশিয়াল অয়েল / এরোমা অয়েল যোগ করুন –
এসেনসিয়াল অয়েল নিয়ে অনেক বেশি ফান্ডা এই ইন্ডাস্ট্রি তে , আমাদের বাংলাদেশে এর কার্যক্রম ০ ভাগ । আমরা আপাতত চায়না থেকে এনে ব্যবহার করছি , একই সাথে আমরা উৎপাদন ও শুরু করেছি ।
৫- মোল্ডে ঢালুন –
কাঠের মোল্ড হলে ভালো , ২৪-৪৮ ঘণ্টার জন্য কাঠের ছাচে ছেরে দিন , ৪৮ ঘন্টা পর মোল্ড থেকে বের করে , চাহিদা অনুযায়ি কেটে , ৪ – ৬ সপ্তাহ কিউরিং এর জন্য রেখে দিন খোলা বাতাসে ।
চলমান বাতাস হতে হবে , বদ্ধ ঘরে না । কিউরিন এর সময় টা নির্ভর করে ভৌগলিক ও আবহাওয়ার উপর । কোন কোন আবহাওয়াই ৩-৪ সাপ্তাহে কিউরিং হতে পারে । আমরা ৩০ দিনের একটা সময় ধরি । পূর্ন বর্ষা ও ঘন সত্য প্রবাহ হলে এই সাবান বানানু নিষেধ ।
💚 তুলশি সাবানের উপকারিতা
+ ফাংগাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
+ ন্যাচারাল গ্লো ও ফ্রেশনেস ফিরিয়ে আনে।
+ রাসায়নিকবিহীন, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি ও ত্বক–বান্ধব।